বাবা আর আমি

 বাবা আর আমি

খাদিজা বেগম 


আজি সেই পঁচিশে জুন- জীবনে প্রথম বার - বাবা আর আমি ভিন্ন- ভিন্ন ছিলাম গাড়িতে,

বাবার গাড়ি টা আগে- আগে হুইচল বাজিয়ে- শেষবারের মতো বাবা - আর আমি যাই বাড়িতে।


শহর, গ্ৰাম ছেড়ে- সাঁই সাঁই করে ছুটছে গাড়ি- আর করছে থেমে থেমে- কলিজা ফাটা চিৎকার,

এদিকে আমার জল - শূন্য চোখ, বাক শূন্য- মুখ, সব হারাবার- একবুক হাহাকার।


গাড়ি থেকে নেমে সবাই- যাচ্ছে নিজ পায়ে হেঁটে - আমার বাবা তখন- যাচ্ছে চাচা দের কাঁধে,

আমি তখন অচল- পড়ে আছি মুখ থুবড়ে -

আলো শূন্য দুই নয়ন- পাগলের মত কাঁদে।


ও বাবা, তুমি যেদিন -দু চোখ বন্ধ করেছ- আমি শত শত বার- ডেকেও খুলতে পারিনি,

সাদা কাফনে জড়ানো- কফিনে শোয়ানো দেহ- হাসি খুশি ভরা মুখটি- এখনো ভুলতে পারিনি।


বাবা, সে দিন প্রথম- এতো ব্যথিত হয়েছি- যেন নিঃশ্বাস চলেনা - এই কষ্টের শান্তনা নাই,

বাবা, সারাদিন তুমি - এই মনের কল্পনাতে- 

আর সারারাত স্বপ্নে - নাই ভোলার উপায় নাই।


আমি আর বাবা, কত- পথ একসাথে দিয়েছি- পাড়ি, কভু হাত ধরে, কখনো বা কাঁধে চরে,

এখনো খুঁজি তোমায় - স্মৃতি নামের পাতায় -

ভুলতে পারিনি তোমাকে - বাবা, খুব মনে পড়ে।


সময়ের হাত ধরে- সব ঠিক হয়ে যায়- জানিনা জানিনা আমি- এই কথাটা কে বলেছে ?

বাবা, তোমার বিরহে - যে ক্ষত হয়েছে মনে - দিনে দিনে তাহা শুধু - আরো বেড়েই চলেছে!


 শুকাবে না ঘা, বন্ধ - হবেনা রক্ত ঝরা, জানি আজীবন বইতে- হবে এই অদৃশ্য ক্ষত,

বাবা তোমার মতন- আর কেউ নেই তো আপন-

জানি, কেউ ভালবাসবে না- আমাকে তোমার মত।


এই ক্ষতটা বইতে বইতে- আমি হয়ে যাব লাশ-

অন্যদের কাঁধে হব- শেষ যাত্রার সোয়ারি,

 যেদিন থেকে তোমাকে- করবনা আর তালাশ-

একি ঠিকানাতে হবে-আমাদের ঘর বাড়ি ।


আবার রাখব তোমার-চোখে আমার এই চোখ-

আবার রাখব তোমার- হাতে আমার এই হাত- 

আবার শুনবো পবিত্র- ঐ মুখ থেকে পবিত্র - নবী রাসূলের গল্প- ও কুরআনের আয়াত ।


বাবা আর আমি ফের- একসাথে কাটাবো কাল-

ও বাবা, আবারও হাটোবো- তোমার ঐ হাত ধরে-  

সেই দিন নেই দূরে আর- আবারো তো চলবো পথ- তোমাকে অনুসরণ - ও অনুকরণ করে।

Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানী আর মূর্খ

জীবন নামের বৃক্ষ

কুমন্ত্রণা দেয়া শয়তান