একটি ছেলে

খাদিজা বেগম


বস্তির একটি ছেলে ছিল পালতো তাহার চাচা,

তাহার পিতা মাতার ছিল জ্ঞাণ বুদ্ধি কাঁচা।


ছেলে মেয়ে তাই দিয়েছে ভাইয়ের কাছে পালতে,

তারও অনেক কষ্ট হতো অল্প টাকায় চলতে।


পড়া লেখা শিখতে চায় না মেয়েটি একটু বোকা,

খুব আগ্ৰহ লেখা পড়ায় নাদুসনুদুস খোকা। 


অল্প আয়ের এই সংসারে ক‌ষ্টেকাটে দিন রাত,

সকালে পায় দুটি রুটি দুপুর দুমুঠো ভাত।


মাঝে মাঝে না খেয়েও কাটিতো তাদের রাত,

সুখের আশায় চাচার কাছে তব দুঃখি বরাত।


দুধের শিশু দিয়ে কাঁদে গর্ভধরণী মা,

নিজের কাছে রাখলে ছেলে বাঁচাতে পারবেনা।


অনেক সন্তান হারিয়েছে এই দুঃখিনী মায়ে,

তাই দিয়েছে বুকের মানিক তাহার চাচার পায়ে।


বাড়ি বাড়ি ধান মলে মায় খায় অন্যের বাড়িতে,

অনেক দিনি রান্না হয় না নিজ ঘরের হাঁড়িতে।


তাহার পরিশ্রমের মূল্য দেয় না তারে কেহ,

খেয়ে না খেয়ে থেকে তার নাজুক হলো দেহ।


সেই দেহেতে সন্তান ছিল হঠাৎ নষ্ট হলো,

ফুটফুটে চাঁদের মতো মরা ছেলে হলো।


রক্তে রক্তে ভিজচ্ছে মাটি ডাক্তারে সেবা নাই,

এমন সময় ছুটে এলো তাহার দরদী ভাই।


নৌকা দিয়ে গেল নিয়ে ডাক্তারের বাড়িতে,

ডাক্তার এসে দেখলো তাহার হাত ধরে নাড়িতে।


এখনো সে বেঁচে আছে সরে যায় সকালে,

বাঁচাতে পারবেনা তাকে আরো দেরি হলে।


ঠিক সময় চিকিৎসা পেয়ে বলিষ্ঠ হলো বোন,

ভাইয়ের কাছে ৠণী হলো বোনের সারা জীবন।


সুস্থ হয়ে স্বামীর ঘরে ফিরে এলো আবার,

এখনো ঠিক মতো পায় না কাপড় কিংবা খাবার।


ক্ষুধার্ত বাঘিনীর মত চিংকার দিয়ে বলে,

আমি এখানে থাকবো না ঢাকা যাবো চলে ।


তুই ঢাকা গিয়ে কি করবি ? কাজ করবো বাসাতে,

খাবার পাবো কাপড় পাবো টাকা পাবো হাতে।


তুই এখানে কাজ করিস হয় না কি তোর তাতে?

এখানের কাজ কর্মে আমার পেট ভরে না ভাতে!


আমার সংসার করতে হইলে তুই ঢাকা যাবিনা !

তার পরও যদি চলে যাও এখানে আবিনা।


ঠিক আছে তবুও যাবো না হয় ফিরবো না আর,

তোমার মত স্বামী কাছে আমি থাকবো না আর।


অন্যের পরনের পুরান কাপড় হবেনা পরিতে,

অর্ধেক গায়ে অন্য অর্ধেক শুকাতে দড়িতে।


অনেক কষ্ট করেছি তো পরানে সহেনা আর,

দুধের শিশু পর করেছি বুকে হাহাকার।


আরে পাগলী তোর ছেলে কি এখনো সেই শিশু?

মেট্রিক পাস দিছে তোর ছেলে, তোর মনে নাই কিছু?


অনেক কষ্ট করেছি আমরা দু'জনে একসাথে,

আর হবনা ভিন্ন আমরা খাবো দুধে ভাতে।


এই বলিয়া কাঁদে দু'জন দু'জনারে ধরে,

ভিন্ন হলে বাঁচবো না আর আমরা যাবো মরে।


দু'জন মিলে যুক্তি করে ঢাকা চলে এলো,

বাবা মায়ের কথা শুনে ছেলে এলোমেলো।


চাকরি করার বয়স হয়নি এখনো তো আমার?

কেমন করে নেব আমি এই বাবা-মায়ের ভার?


বাবা, চাচা, ছেলে মিলে যুক্তি করে তারা,

চেষ্টা করলে মিলে যাবে পেলে তার ইশারা।


একটি চাকরি মিলে গেল একটি সর্থ দিয়ে,

এক চোখ ওয়ালা একটি মেয়ে করতে হবে বিয়ে।


ক'দিন ধরে ভাবলো তারা পেলনা কোন কূল,

অভাব তারাতে মরিয়া সব চাকরির জন্য ব্যকুল।


মেয়ের চোখ আছে কি বা নাই সে দিকে খেয়াল নাই,

বারেবারে শুধায় তারা চাকরি চাই চাকরি চাই।


চাকরি হলো বিয়ে হলো সবি ঠিক আছে,

প্রথম দিন অফিস যাবে জামা নাই তার কাছে?


ছোট কাকার জামা নিয়ে পরিয়ে দিলো গায়ে,

তখন তিনি লাজুক চোখে মিটি মিটি চায়ে।


সেই মেয়ের উছিলায় রক্ষা পেল বাবা-মায়ের সংসার,

ধীরে ধীরে হারিয়ে গেল অভাবের হাহাকার।


এখন তাহার আছে চাকরী বাকরি, ব্যবসা বানিজ্য,

টাকা পয়সা, বাংক ব্যলেন্স দালান কোঠা ঐশ্বর্য।


এখন অতীতের কথা তার আর পরেনা মনে,

এখন আর মানায় না তারে ঐ মেয়েটির সনে।


এখন তিনি স্বপ্ন দেখে দুই চোখ ওয়ালা মেয়ে,

অশেষ সুখী হবেন তিনি ঐ মেয়েকে পেয়ে।


স্বার্থপরের মত ভাবলে নিজের সুখের কথা,

কোন দোষেতে দিলে তুমি তারে এতো ব্যথা?

Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানী আর মূর্খ

জীবন নামের বৃক্ষ

কুমন্ত্রণা দেয়া শয়তান